বাস্তব জীবনের অভিজ্ঞতা

 বাস্তব জীবনের অভিজ্ঞতা

;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;

               আমার নাম সঞ্জয় কুমার পাল। আমি দীর্ঘ আড়াই বছর (মে/২০১৪ থেকে ডিসেম্বর/২০১৬) কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ২য় শস্য বহুমূখীকরণ প্রকল্প (এসসিডিপি) তে "কমিউনিটি ফ্যাসিলিটেটর (সিএফ)" পদে উপজেলা কৃষি অফিস, হরিণাকুণ্ডু, ঝিনাইদহে চাকরী করেছি। প্রজেক্টের মেয়াদ শেষ, তাই আজ বেকার।

এই আড়াই বছরে যে যে অভিজ্ঞা অর্জন করেছি

"""""""""""""""'""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""
১) ৫০-৬০ জন কৃষকের সামনে দাড়িয়ে কৃষক প্রশিক্ষণে প্রশিক্ষক হিসাবে ক্লাস নেয়ার অভিজ্ঞা।
২) মাঠ পরিদর্শনে গিয়ে কৃষকদেরকে পরামর্শ দেবার অভিজ্ঞা।
৩) মাঠ দিবসে একজন বক্তা হিসাবে বক্তব্য দেবার মাধ্যমে কৃষি সম্প্রসারণ কাজ প্রসারিত করার অভিজ্ঞা।
৪) কৃষকের সাথে সুসম্পর্ক - যা উপজেলা থেকে চলে এসেছি এক বছর হলো, কিন্তু এখনো অনেক কৃষক ভাইয়েরা ফোনে আমার খোজ খবর নেই, তার ফলে বুঝতে পারি যে কতটা সম্পর্ক ছিল তাদের সাথে।
৪) বিভিন্ন উন্নয়ন মূলক অনুষ্ঠান আয়োজন ও ব্যবস্থাপনা করার অভিজ্ঞা।
৫) রিটার্ন-রিপোর্ট প্রস্তুত অর্থাৎ অফিসের ডেভলপমেন্ট সেক্টরের কাজ করার অভিজ্ঞা।
৬) কম্পিউটার চালনায় পারদর্শিতা।
৭) উপজেলার সকল ডিপার্টমেন্টেরর ছোট বড় অফিসারদের সাথে সুসম্পর্ক এবং তাদের মাঝে চলাচলের অভিজ্ঞা। 
উল্লেখ্য যে উপরোক্ত সকল অভিজ্ঞায় আমার প্রিয় উপজেলা কৃষি অফিসার জনাব মুহম্মদ আরশেদ আলী চৌধুরী স্যারের তত্ত্বাবধানে অর্জিত। 
       আরও আরেকটা অভিজ্ঞা হলো একজন প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তার কতটা পরিশ্রম করতে হয়, তা স্যারকে দেখে জানতে পেরেছি। সাধারণত অফিস সকাল ৯.০০ টা থেকে বিকাল ৫.০০ টা পর্যন্ত। কিন্তু কাজ শুরু করতে হত কোন দিন সকাল ৭ বা ৮ টা থেকে, আর শেষ হত রাত ৮ বা ৯ টায়। সারাদিন বিভিন্ন প্রোগ্রাম করা, রিটার্ন-রিপোর্ট প্রস্তুত এবং তা উর্ধতন কর্মকর্তার কার্যালয়ে পাঠানো। অনেক কাজ করতে হত আমাদের। সম্পূর্ন কাজ সাথে থেকে নির্দেশনা ও পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করতেন উপজেলা কৃষি অফিসার স্যার।
      এত অভিজ্ঞা থাকা সত্বেও আজ আমি বেকার। শুধু আমি না, ৫২ টা উপজেলার ৫২ জন সিএফ আজ বেকার নামক অভিশপ্ত জীবন যাপন করছি। যা দেখার মত ডিএই তে কেউ নাই। আর দেখবেই বা কেন? আমরা কারা? আমরা ত ডিএই এর জারজ সন্তান। যাদেরকে এসসিডিপি জন্ম দিয়ে ফেলে দিয়েছে। অনেকবার ডিজি, পিডি স্যারদের কাছে গিয়েছি। অনেক কাকতি-মিনতি করেছি আমাদের একটা ব্যবস্হা করে দেবার জন্য। কিন্তু কেউ শোনে নি আমাদের হাহাকার। কেউ একটুও চিন্তা করেনি যে আমাদের কি হবে, কি হবে আমাদের পরিবারের। চাকরী করতে করতে চাকরী হারানোটা যে কতটা কষ্টের, তা শুধু যারা হারায়, তারাই বোঝে। শুনেছি এসসিডিপি এর নতুন কর্মসূচী আনার জন্য প্রোপোজাল দিয়েছে। কর্মসূচীতে আমাদের রাখবে বলে জানিয়েছিল প্রকল্প থেকে। কিন্তু আমাদের বাদ দিয়েই প্রোপোজাল দিয়েছে বলে জানতে পেরেছি। যা আমাদের কাছে খুবই হতাশার একটা কারণ।
      কারো প্রতি আমাদের আক্ষেপ নাই। আক্ষেপ আমাদের ভাগ্যের উপর। ভাগ্য যদি খারাপই না হবে, তবে কেন প্রকল্পের অন্য কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রজেক্ট বেনিফিট হিসাবে লক্ষ টাকার উপরে পায়, কিন্তু আমরা তা থেকে বঞ্চিত?
     যাই হোক, আজ এত কথা লিখছি, তার কারণ আমি আজ কৃষি সম্প্রসার অধিদপ্তরের "উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা" পদে চাকরীর আবেদন করলাম। আমার সরকারী চাকুরীর বয়স আছে, তাই করতে পারলাম। কিন্তু আমার কলিগ, যাদের অধিকাংশদেরই সরকারী চাকরীর বয়স নেই, তাদের কথা ভেবে কষ্ট পাচ্ছি। নিজের চাকরী নেই সে এক কষ্ট, আবার কলিগদের অসহায়তার কথা শুনে যে তারা কতটা কষ্টের মধ্যে আছে, তাদের পরিবার নিয়ে কতটা অসহায়তার মধ্যে আছে, তা শোনার পরে আরও কষ্ট লাগে।
      আজ একটা প্রশ্ন আমার মনে বার বার নাড়া দিচ্ছে। তা হলো এই যে, এত অভিজ্ঞা অর্জন করেছি। আমার আছে একটা অভিজ্ঞা সনদ। তার মূল্যায়ন কি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে আছে? আমার মনে হয়-

      নেই

  থাকলে আবার আমাকে আবেদন করতে হত না। তাহলে অভিজ্ঞতা সনদ দিয়ে কি হবে? সেই ত আমাকে আবার দিতে হবে পরীক্ষা, করতে হবে পরীক্ষায় পাস, তারপর পাঠাতে হবে ক্ষমতাধর ব্যক্তিদের সুপারিশ, আর সুপারিশ করতে লাগবে টাকা। সেই টাকাটায় আজ আমার বা আমার বাবার নাই। আর পরীক্ষায় পাস? সেটা করতেও পারি, আবার নাও পারি। তবে পাস না করার সম্ভবনায় বেশি, কারণ পড়াশোনা করার মন মানষিকতায় হারিয়ে ফেলেছি। তাই চাকরী পাবার কথা আমি চিন্তাও করতে পারছি না।
       শুধু সরকারী ডিপার্টমেন্টের কথা বলছি কেন, বেসরকারী অর্থাৎ কোম্পানি গুলোতেও একই নিয়ম। সেখানেও দিতে হবে পরীক্ষা, করতে হবে পাস, ধরতে হবে লোক, পাঠাতে হবে সুপারিশ।

তাহলে অভিজ্ঞার মূল্য কোথায় বলতে পারেন?

 আজ আমার এই লেখাটা যে বা যিনি পড়ছেন, তার কাছে প্রশ্ন করলাম। আশা করি উত্তর দেবেন। 

         আর আমার লেখা যদি বাংলাদেশ সরকারের কাছে পৌছায়,  তবে সরকারের কাছে একটা আবেদন করব যেন প্রকল্পগুলোতে আমাদের মত আউটসোর্সিং এ লোকবল নিয়োগ দেবার নিয়ম বন্ধ করেন। চাকরী করতে করতে চাকরী হারালে মনবলই নষ্ট হয়ে যায়।



মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

চিটারী বাটপারি করার মন-মানসিকতা ছেড়ে দিয়ে সততার সাথে বিজনেস করার অনুরোধ

সততার ফল